মো: আব্দুল ওয়াদুদ, বগুড়া প্রতিনিধি : দু’শ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা বগুড়ার পোড়াদহ মেলা বুধবার লাখো মানুষের আগমনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার একই জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বৌ মেলা। পোড়াদহ মেলাটি উত্তরাঞ্চলের মাছ ও মিস্টির জন্য বিখ্যাত। মেলাটিকে মাছের মেলাও বলা হয়ে থাকে। মেলা উপলক্ষে এলাকায় ঘরে ঘরে জামাই আত্মীয়দের আগমন ঘটে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ী এলাকার পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেলা উপলক্ষে ওই উপজেলার ঘরে ঘরে জামাই ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রন জানানো হয়। ঈদসহ অন্য উৎসবে জামাই বা আত্মীয়দের নিমন্ত্রন না জানালেও মেলা উপলক্ষে তাদেরকে নিমন্ত্রন জানানো হয়। ঈদে ওই এলাকার প্রবাসীরা না আসলেও মেলা উপলক্ষে তারা দেশে আসেন। ঈদ উপলক্ষে ওই এলাকার লোক যত না খরচ করে তার চেয়ে বেশি খরচ করে এই মেলা উপলক্ষে। মেলা থেকে বড় মাছ এবং বড় বড় মিস্টি এনে সমাদর করা হয় জামাই ও আত্মীয়দের। উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদী ঘেষে পোড়াদহ নামকস্থানে সন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে ১দিনের জন্য এই মেলা বসে। একদিনের জন্য মেলা হলেও সপ্তহ জুড়েই মেলার আমেজ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলায়। বিশেষ করে গাবতলী উপজেলায় মেলাটি হওয়ায় এখানে প্রত্যেক পরিবারেরই আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। মেলায় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীরাও আসে। মেলায় মূল আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ১টি বাঘাইড় মাছের ওজন ছিল ৭৬ কেজি। মাছটির মূল হাকা হয়েছে ১লাখ ২০ হাজার টাকা। মাছটি মেলায় এনেছিলেন বিপ্লব নামের একজন মাছ ব্যবসায়ী। বুধবার ভোররাতের আগেই আড়তে আনা হয় বড় আকারের মাছগুলো। আর ভোররাত থেকেই আড়তে আড়তে ছুটে যান খুচরা ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুযায়ী তারা মাছ কেনেন। পরে মাছের পসরা সাজিয়ে দোকানে দোকানে জেঁকে বসেন এসব ব্যবসায়ীরা। বাঘাইড় মাছ ছাড়াও মেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াাল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালবাউস, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠেছিল। মাছের পরে মেলায় বরাবর মতো আকর্ষণ ছিল বাহারি মিষ্টান্ন সামগী। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়–ু, খই, শুকনা মিষ্টির দোকানেও ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। এছাড়া দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মিষ্টি পোড়াদহ মেলার অন্যতম আকর্ষণ। বগুড়া জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও মেলায় দর্শনার্থীদের আগমন ঘটেছিল উল্লেখযোগ্য পরিমান। গাইবান্ধাজেলার সাঘাটা উপজেলার ডাকবাংলা থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থী সামছুল কবির জানান, শখের বসেই প্রতিবারেই পোড়াদহের মেলায় আসি। শুধুমাত্র কেনা কাটার জন্য নয় এখানে দেখার মত অনেক কিছুই থাকে। গ্রাম গঞ্জের হারিয়ে যাওয়া। ঐতিহ্যবাহী অনেক সামগ্রীমেলায় স্থান পায়। কাঠের তৈরি,বাঁশের তৈরি, বেতের তৈরি চোখ ধাঁধাঁনো আসবাবপত্রসহ সাংসারিক কাজের অসংখ্য সামগ্রী মেলায় সবার নজর কাড়ে। এদিকে এলাকাবাসী আব্দুস সাত্তার জানান, ঈদ উৎসবের মত মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত দিয়ে আনতে হয় মেলা উপলক্ষে। এখানে প্রতিটি বাড়িতেই আত্মিয় স্বজনের আগমন ঘটেছে। সকাল থেকে শুরু হয়ে দিনের শেষ সময় পর্যন্ত মানুষের আগমন ঘটতে থাকে। মেলার চার পার্শ্বের রাস্তায় সকাল ১০টার পর থেকেই প্রচন্ড রকমের জ্যাম হওয়ায় কোন যানবাহন মেলার ৩কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনি। পুরুষের পাশাপাশি প্রচুর পরিমান শিশু ও মহিলাদেরকেও দর্শনার্থী হিসেবে দেখা গেছে। মেলার মূল আকর্ষণ দেশী-বিদেশী প্রজাতির বড় মাছ, মিষ্টি, কাঠের তৈরি ফার্নিচারসহ শিশুদের খেলনা, কৃষি সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি মেলায় নাগরদোলা, সার্কাসসহ শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল উল্লেখ করার মত। মেলার ইজারাদার ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, মেলাটি ১দিনের জন্য হলেও স্থায়ী হয় ৩ দিনের মত। প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন। এই মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা আসেছে। তিনি মনে করেন এবারেও মেলাটি ব্যপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়েই শেষ হবে।
Check Also
ধুনটে নববধুর লাশ উদ্ধারঃ স্বামী পালাতক
রাকিবুল ইসলাম , রাকিবুল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ার ধুনটে দুলালী খাতুন (১৬) নামের এক নববধূর লাশ …