মনজুর হাবীব মনজু, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। বর্তমানের বৈশ্বিক সমস্যা করোনার প্রভাবে দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রাত্যহিক সমস্যার মধ্যে আরেক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে গাইবান্ধার একমাত্র কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা উপজেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল সংশ্লিষ্টদের। এখানকার কর্মরত শ্রমিক- কর্মচারী ও কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না গত চার মাস ধরে। এর ফলে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। তিন মাস পূর্বে আখমাড়াই মৌসুম শেষ হলেও এ চিনিকলে সরবরাহ করা আখের মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে প্রায় চার হাজার আখচাষীর। মাড়াই মৌসুমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মালামাল ও শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদারদের পাওনা দুই কোটি টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। সরকারি সাহায্য বা কোন প্রণোদনা নয়, রংপুর চিনিকলের কাছে তাঁদের পাওনা টাকার দাবীতে এখন প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছেন আখচাষী ও শ্রমিক-কর্মচারীরা।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতর বন্ধ থাকায় টাকা ছাড় না হওয়া এবং দোকানপাট বন্ধ থাকার কারণে চিনিকলে উৎপাদিত চিনি বাজারে বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবী করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুর চিনিকলে কর্মরত প্রায় এক হাজার স্থায়ী ও মৌসুমী শ্রমিক-কর্মচারী এবং কর্মকর্তার প্রতি মাসের বেতনভাতা প্রয়োজন ৯৫ লক্ষ টাকা। গত জানুয়ারি মাস থেকে বাকি থাকায় এ বেতনভাতার বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। চাষীদের সরবরাহকৃত আখের বকেয়া তিন কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও চিনিকলের নিজস্ব বাণিজ্যিক খামার ও মিলের মাড়াই মৌসুমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরবরাহ করা শ্রমিক এবং প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারদের পাওনাও প্রায় দুই কোটি টাকা। গত চার মাস ধরে এ সব পাওনা পরিশোধ না হওয়ায় দরিদ্র শ্রমিক-কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, বাড়ির জমানো টাকা শেষ হওয়ার পর ধার দেনা করে কিছু দিন চালিয়েছি। বর্তমানে দোকানীরাও আর বাকীতে তাদের খরচ দিতে রাজি হচ্ছেন না। চিনিকলের চাকুরীজীবী হওয়ায় তারা না পারছেন কোথাও হাত পাততে, সরকারি বা কোন সাহায্যের তালিকাতেও উঠছে না তাদের নাম। এ ভাবে আর কিছুদিন চললে তাদের না খেয়েই মরতে হবে। একই পরিস্থিতি আখচাষী ও ঠিকাদারদের।
রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবু সুফিয়ান সুজা জানান, শ্রমিক-কর্মচারীদের চার মাসের বেতন বাকী থাকায় তারা এখন এক প্রকার না খেয়েই দিনাতিপাত করছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে মিল বন্ধ থাকলেও প্রতিদিনই তারা বেতনভাতার দাবীতে মিলে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল অবিলম্বে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারী হস্তক্ষেপ ও সহায়তার দাবী জানিয়েছেন। এ দাবীতে সম্প্রতি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আবেদন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম মাধুকরকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন এ চিনিকলের আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য ১২ কোটি টাকার চাহিদা জানিয়ে প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া করোনার কারণে চা-মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারেও চিনি বিক্রি হচ্ছে না। তবে অচিরেই অর্থনৈতিক এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।