সাজেদুর আবেদীন শান্ত, বাঙালি বার্তাঃ
“কান পেতে শুনি
কি বলতে চায়
জল্লাদখানা বধ্যভুমি’’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যতগুলি বধ্যভূমি পাওয়া যায় তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বধ্যভুমি জল্লাদখানা বধ্যভুমি। এই বধ্যভুমিটি রাজধানীর মিরপুর ১০ নাম্বারে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় মিরপুরের বিহারী অধ্যুষিত এলাকাগুলো সাধারণত বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল। এই এলাকাগুলোতে নিরিহ বাঙালি ধরে নিয়ে এসে অমানষিক নির্যাতন চালাতো পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও স্থানীয় অবাঙ্গালি রাজাকারেরা ।
জল্লাদখানা বধ্যভূমির সুপারভাইজার প্রমিলা বিশ্বাস বাঙালি বার্তার স্টাফ রিপোর্টার সাজেদুর আবেদিন শান্ত কে বলেন, ‘১৯৭১ সালে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার বাঙালিকে ধরে এনে জবাই করে পাম্প হাউজের মধ্যে ফেলে দেয় পাক হানাদার বাহিনী।এই পাম্প হাউজটি ছিলো ঢাকা ওয়াসার পরিত্যক্ত পাম্প হাউজ। এই পাম্প হাউজটির দৈর্ঘ ৪০ ফিট বাই ৩০ ফিট। ধারণা করা হয়, গণহত্যার পর ফেলে দেওয়া মানুষের লাশে ভরে গিয়েছিলো এই পাম্প হাউজটি। ১৯৭৩ সালে এই পাম্প হাউজটি থেকে তিন ট্রাক দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয় এবং সেগুলো সাভা্রের নবীনগরে দাফন করা হয়। এরপর ১৯৯৯ সালের ১৫ই নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-এর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড এই পাম্প হাউজটাকে খনন করে এবং এখান থেকে ৭০ টা মাথার খুলি এবং ৫৩৯২ টি অন্যান্য অস্থিখন্ড উদ্ধার করে সে গুলো বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষন করা হয়। প্রতিদিন এই জল্লাদখানায় প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন দর্শনার্থী আসে এবং প্রতি শনিবার আমরা বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বাচ্চাদের নিয়ে এই জল্লাদখানা প্রাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন আসরের আয়োজন করে থাকি এবং সেই আসর গুলোতে একজন মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ পরিবারের সদস্য থাকে। এতে করে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধর গণহত্যা সম্পর্কে জানে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়। আর এই আয়োজনটি পরিচালনা করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এই জল্লাদখানাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে। প্রতি বছর আমরা এই জল্লাদখানা বদ্ধভুমি প্রঙ্গনে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস পালন করি এবং ২০০৭ সাল থেকে ২১ জুন জল্লাদখানা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে আসছি।’