সব ঠিক থাকলে এই সময়ে হয়তো নিউ জিল্যান্ডে থাকতেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে ব্যস্ত থাকতেন কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের প্রস্তুতিতে। ভারত-পাকিস্তানে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে, এবার উপমহাদেশের বাইরের স্বাদও পেতেন। অথচ এখন তিনি দেশে, অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের হয়ে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ কখন মেলে!
চোট আর অসুস্থতা আমিনুলকে দাঁড় করিয়েছে এই বাস্তবতার মুখোমুখি। ২১ বছর বয়সী লেগ স্পিনার অবশ্য পিছু হটছেন না। জীবন যুদ্ধ তাকে শিখিয়েছে ক্যারিয়ারে এই সব চড়াই-উৎরাই সামলে এগিয়ে যেতে।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের মোটামুটি নিয়মিত সদস্যই হয়ে উঠছিলেন আমিনুল। কোভিডের প্রকোপে অন্য সবার মতো থমকে যেতে হয় তাকেও। বিপত্তির শুরু কোভিড বিরতির পর হওয়া প্রেসিডেন্ট’স কাপ ওয়ানডেতে। গত অক্টোবরে ওই আসরে খেলার সময় টান পড়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে। ৩ ম্যাচ খেলেই শেষ তার টুর্নামেন্ট।
এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ, যে সংস্করণ তার আপন। কিন্তু এখানেও সঙ্গী হতাশা। খেলতে পারলেন মোটে ১ ম্যাচ!
ক্রিকেটীয় চোট টুকটাক ছিল। তবে ঝামেলা পাকিয়েছে রোগ। টনসিলের সমস্যা প্রচণ্ড ভুগিয়েছে। সেরে উঠতে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। ছিল শ্বাসকষ্টও।
নিউ জিল্যান্ড সফরের জন্য দল ঘোষণার সময় সেরে ওঠার পথে ছিলেন। কিন্তু তাসমান সাগর পাড়ের দেশটিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সমস্যা বাড়তে পারে ভেবে নেওয়া হয়নি তাকে।
ক্রিকেটীয় চোটে মনকে বোঝানো যায়। এরকম অসুস্থতার কারণে দলের বাইরে থাকা কঠিন। আমিনুল তবু নিয়তি মেনে নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছেন আশাভরে।
“প্রেসিডেন্ট’স কাপ ওয়ানডেতে খেলার সময় যে চোট পেয়েছিলাম, টুর্নামেন্টের পর ৮-৯ দিন সময় লেগেছিল সেটা থেকে সেরে উঠতে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা আর নাই। এখন পুরোপুরি সুস্থ আছি।”
“কোথায় খেলব, সেটা তো আমার হাতে নেই। যেখানেই খেলি, আমি সব সময়ই ভাবি, নিজের শতভাগ দিতে পারছি কি না। নিজের শতভাগ দেওয়াটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর যদি কোথাও সুযোগ আসে, সেখানে নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব।”
নিউ জিল্যান্ড ভুলে আপাতত তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে সিরিজের দিকে। বিসিবি ইমার্জিং দলের সঙ্গে আছেন। তবে প্রথম চার একদিনের ম্যাচে একাদশে সুযোগ মেলেনি। আরেকটি ম্যাচ আছে। এরপর আছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
আমিনুল জানেন, তার সুযোগও আসবে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য।
“পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এগুলো মেনেই ক্রিকেট খেলতে হবে। যখন সুযোগ আসবে না, তখন নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। সবসময় এভাবেই চিন্তা করি।”
বয়সভিত্তিক দলে সবাই সম্ভাবনায় ব্যাটসম্যান আমিনুলকেই এগিয়ে রাখতেন। সঙ্গে লেগ স্পিন ছিল মোটামুটি কার্যকর। হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের সেই সময়ের প্রধান কোচ সাইমন হেলমট মুগ্ধ ছিলেন আমিনুলে। তরুণ এই ব্যাটসম্যানের মধ্যে দেখেছিলেন টেস্টে দেশের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করার সম্ভাবনা।
পরে তার চোখেই ধরা পড়ে এই তরুণের আরেকটি বিশেষত্ব। আমিনুলের মাঝে তিনিই প্রথম দেখেন বাংলাদেশে লেগ স্পিনারের খরা কাটানোর সম্ভাবনা। নজর রাখতে বলেন নির্বাচকদের। এরপরই বদলে যেতে থাকে আমিনুলের ক্যারিয়ারের গতিপথ।